Friday, July 8, 2016

কোরআন শরীফে শব্দ ও আয়াতের পূণরাবৃত্তির রহস্য


শব্দ ও আয়াতের পূণরাবৃত্তির রহস্য
قرآن শরীফের سورة الفجر এর ৭ নং আয়াতে  إرامনামক একটি গোত্র কিংবা শহরের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু  إرامএর নাম কোনো ইতিহাসে পাওয়া যায় না। তাই قرآن শরীফের তাফসীরকারকরাও সুস্পষ্টভাবে এ শব্দটির অর্থ বলতে সক্ষম হননি।
১৯৭৩ সালে সিরিয়ার এরলূস নামক একটি পুরনো শহরে খনন কার্য চলাকালীন কিছু পুরনো লিখন পাওয়া গেছে। এ সমস্ত লিখন পরীক্ষা করে দেখা গেছে  إرامশহরের উল্লেখ আছে। এক সময়ে এরলূস অঞ্চলের লোকজন  إرامশহরের লোকজনের সংগে ব্যবসা-বাণিজ্য করত। এ সত্যটা আবিষ্কৃত হলো মাত্র সেদিন অর্থাৎ ১৯৭৩ সালে। প্রশ্ন হচ্ছে দেড় হাজার বছর আগে নাযিল করা قرآن শরীফে এই শহরের নাম এলো কি করে? আসলে قرآن শরীফ হচ্ছে الله تعالىর বাণী, আর الله تعالى এখানে  إرامশহরের উদাহরণ দিয়েছেন।
قرآن শরীফে হযরত মোহাম্মদ (স.) এর একজন দুশমনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সে হচ্ছে আবু লাহাব। ওহী নাযিল হওয়ার পর যদি আবু লাহাব ইসলাম কবুল করতো তাহলে قرآن শরীফের আয়াতটি মিথ্যা প্রমাণিত হতো, কিন্তু আবু লাহাব ইসলাম গ্রহণ করেনি এবং قرآن শরীফের বাণী চিরকালের জন্য সত্য হয়েই রয়েছে।
قرآن শরীফে সূরা আর الروم এ পারস্য সাম্রাজ্য ধ্বংসের ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে এমনকি যে সময় ওহী নাযিল হয় তখন মানুষের পক্ষে বিশ্বাস করা অকল্পনীয় ছিল যে, রোমকদের যারা পরাজিত করলো তারা অচিরেই তাদের হাতে ধ্বংস হতে পারে, কিন্তু قرآن শরীফ এ বিষয়ে ভবিষ্যদ্বানী করেছে এবং তা এ আয়াত নাযিল হবার ৭ বছর সময়ের মধ্যে, অর্থাৎ ৬২৭ খ্রিস্টাব্দে এসে সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
এ আয়াতে فِى أَدْنَى الْاَرْضِ বলে الله تعالى গোটা ভূ-মণ্ডলের যে স্থানটিকে সর্বনিম্ন অঞ্চল বলেছেন তা ছিলো সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও জর্দানের পতিত ডেড সী এলাকা। এ ভূখণ্ডেই ৬২৭ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা ইরানীদের পরাজিত করে। মাত্র কিছুদিন আগে আবিষ্কৃত ভূ জরিপ অনুযায়ী এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এই এলাকাটা সারা দুনিয়ার মধ্যে আসলেই নিম্নতম ভূমি। সী লেবেল থেকে ৩৯৫ মিটার নীচে। এ জায়গাটা যে গোটা ভূ-খণ্ডের সবচেয়ে নীচু জায়গা এটা ১৪শ বছর আগে মানুষ কি করে জানবে। বিশেষ করে এমন একজন মানুষ, যিনি ভূ-তত্ত্ব, প্রাণীতত্ত্ব ইত্যাদি কোনো তত্ত্বেরই ছাত্র ছিলেন না।
قرآن শরীফের এক জায়গায় সমুদ্রের তরংগ সম্বন্ধে বলা হয়েছে, ঢেউ যখন অগ্রসর হয় তখন দুটি ঢেউয়ের মধ্যবর্তী স্থান অন্ধকার থাকে। আমরা জানি হযরত মোহাম্মদ (স.) মরুভূমি অঞ্চলের সন্তান ছিলেন, তিনি সমুদ্র কখনো দেখেননি। সুতরাং সমুদ্র তরংগের দুটি ঢেউয়ের মধ্যবর্তী স্থান যে অন্ধকার হয় তা তিনি জানবেন কি করে? এতে প্রমাণিত হয়, হযরত মোহাম্মদ (স.) নিজে قرآن রচনা করেননি। আসলেই প্রচণ্ড ঝড়ের সময় সমুদ্র যখন বিক্ষুব্ধ হয় তখন দ্রুতগতিসম্পন্ন তরংগগুলোর মধ্যবর্তী অংশ সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হয়।
 قرآن এর আরেকটি বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, লোহা ধাতু বিবরণ।  قرآن এর سورة الحديدالله تعالى বলেছেন, আমি লোহা নাযিল করেছি যাতে রয়েছে প্রচুর শক্তি ও মানুষের জন্য প্রভূ কল্যাণ। লোহা নাযিলের বিষয়টি তাফসীরকারকরা নানাভাবে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন, কিন্তু যেখানে الله تعالىর নাযিল শব্দটি রয়েছে সেখানে এতো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের দিকে না গিয়ে আমরা যদি  قرآن এর আক্ষরিক অর্থের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো, আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভাবনীও ঠিক একই কথা বলছে। পদার্থবিজ্ঞানীরা বলেন, লোহা উৎপাদনের জন্য ১৫ লক্ষ সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন তার কোনো উপকরণ আমাদের পৃথিবীতে নেই। এটা একমাত্র সূর্য এর তাপমাত্রা দ্বারাই সম্ভব। হাজার হাজার বছর আগে সূর্যদেশে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের ফলে লোহা নামের এ ধাতু মহাশূন্যে ছিটকে পড়ে। পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে তা পৃথিবীতে নাযিল হয়। লোহা সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত তথ্য ঠিক একথাটাই প্রমাণ করেছে। দেড় হাজার বছর আগের আরব বেদুইনরা বিজ্ঞানের এ জটিল সূত্র জানবে কি করে...
এই সূরার আরেকটি অংকগত মোজেযাও রয়েছে। ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী  سورة الحديد  যা قرآن এর ৫৭ তম সূরা। আরবীতে   سورة الحديدএর সংখ্যাগত মান হচ্ছে ৫৭। শুধু الحديدএর সংখ্যাগত মান ২৬, আর লোহার আণবিক সংখ্যার মানও হচ্ছে ২৬।
 قرآن এর অনেক জায়গায়ই একের সংগে অন্যের তুলনা উপস্থিত করা হয়েছে। এ তুলনা উপস্থিত করার ব্যাপারে একটি অবিশ্বাস্য মিল অবলম্বন করা হয়েছে এবং তা হচ্ছে, সে দু’টি নাম অথবা বস্তুকে সমান সংখ্যাতেই الله تعالى তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন, قرآن শরীফে সূরা আলে ইমরান এর ৫৯ নং আয়াতে الله تعالى বলেছেন, الله تعالىর কাছে ঈসার তুলনা হচ্ছে আদমের মতো।
এটা যে সত্য তা আমরা বুঝতে পারি। কারণ, মানবজন্মের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এঁদের কারোরই জন্ম হয়নি। আদম (আঃ) এর মাতাও ছিলো না, পিতাও ছিলো না এবং ঈসা (আঃ) এরও পিতা ছিলো না। এখন এই তুলনাটি যে কতো সত্য তার প্রমাণ পাওয়া যায় যখন আমরা قرآن শরীফে এ দুটি নামের মোট সংখ্যা অনুসন্ধান করি। দেখা যাচ্ছে, قرآن শরীফে ঈসা (আঃ) নামটি যেমন ২৫ বার এসেছে, তেমনি আদম (আঃ) নামটিও এসেছে ২৫ বার।  قرآن এর বাণীগুলো যে মানুষের নয় তা বোঝা যায় এ দু’টি নামের সংখ্যার সমতা দেখে। الله تعالى যেহেতু বলেছ্নে, এ দুটো একই রকম। তাই সেগুলোর সংখ্যা গণনাও ঠিক একই রকমের রাখা হয়েছে।
এই তুলনার ক্ষেত্রে আরেকটি অলৌকিক বিষয় হলো, যেখানে তুলনাটি অসম সেখানে সংখ্যা দুটিকেও অসম বলা হয়েছে। যেমন,  قرآن এ বলা হয়েছে সুদ এবং বাণিজ্য এক নয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এ শব্দ দু’টির একটি  قرآن এ এসেছে ৬ বার অন্যটি ৭ বার।
বলা হয়েছে, জান্নাতের অধিবাসী ও জাহান্নামের অধিবাসী সমান নয়। জান্নাতের সংখ্যা হচ্ছে ৮, আর জাহান্নামের সংখ্যা হচ্ছে ৭।
سورة أعراف এ এক আয়াতে আছে ‘যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে কুকুরের মতো’। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয় যখন আমরা দেখি, যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতকে অস্বীকার করে’ এই বাক্যটি  قرآن এ সর্বমোট ৫ বার এসেছে। যেহেতু তাদের উদাহরণ দেয়া হয়েছে কুকুরের সাথে, তাই সমগ্র  قرآنالكلب তথা কুকুর শব্দটাও এসেছে ৫ বার।
سبع سموات কথাটির অর্থ হলো সাত আসমান। আশ্চর্য হলো,  قرآن এ এই সাত আসমান কথাটা ঠিক সাত বারই এসেছে। خلق السموات আসমানসমূহের সৃষ্টির কথাটাও ৭ বার এসেছে, সম্ভবত আসমান ৭টি তাই। سبعة أيام মানে ৭ দিন। একথাটাও  قرآن এ ৭ বার এসেছে।
অংকগত মোজেযা এখানেই শেষ নয়।
দুনিয়া ও আখেরাত এ দু’টো কথাও  قرآن এ সমান সংখ্যায় এসেছে, অর্থাৎ সর্বমোট ১১৫ বার করে।
 ঈমান ও কুফর শব্দ দু’টোও সমপরিমাণে বলা হয়েছে, অর্থাৎ ২৫ বার করে।
গরমও ঠাণ্ডা যেহেতু দু’টি বিপরীতমুখী ঋতু, তাই এ শব্দ দুটো সমান সংখ্যক অর্থাৎ ৫ বার করে এসেছে।
আরবী ভাষায় قل মানে বলা, তার জবাবে বলা হয় قالوا মানে তারা বললো। সমগ্র  قرآن এ ৩৩২ বার করে আছে।
মালাকুন কিংবা মালায়েকাহ ফেরেশতা কিংবা ফেরেশতারা।  قرآن এ এ শব্দটি এসেছে ৮৮ বার। একইভাবে ফেরেশতার চির শত্রু শয়তান কিংবা শায়াতীন এ শব্দটিও এসেছে ৮৮ বার।
الخبيث মানে অপবিত্র, الطيب মানে পবিত্র। সমগ্র  قرآن এ এ দু’টি শব্দ মোট ৭ বার করে, অর্থাৎ একই সংখ্যায় নাযিল হয়েছে।
প্রশ্ন জাগতে পারে দুনিয়ায় ভালোর চাইতে মন্দই তো বেশী, তাহলে এখানে এ দুটো শব্দকে সমান রাখা হলো কিভাবে। এ কথার জবাবের জন্যে  قرآن এর سورة الأنفال ৩৭ নম্বর আয়াতটির দিকে লক্ষ্য করা যাক। এখানে الله تعالى বলেছেন, অপবিত্রকে পবিত্র থেকে আলাদা করার জন্যে তিনি অপবিত্রকে একটার ওপর আরেকটা রেখে পুঞ্জীভূত করেন এবং সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে ফেলে দেন। এতে বুঝা যায়, যদিও পাপ পুণ্য’ সমান সংখ্যায় এসেছে, কিন্তু ‘পুঞ্জীভূত’ করা দিয়ে তার পরিমাণ যে বেশী তা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
يوم মানে দিন সমগ্র  قرآن এ এ শব্দটি ৩৬৫ বার উল্লেখ করা হয়েছে। বছরে যে ৩৬৫ দিন, এটা কে না জানে। يوم শব্দের বহুবচন أيام মানে দিনসমূহ, এ শব্দটি এসেছে ৩০ বার। আরবী ভাষায় চাঁদ হচ্ছে মাসের সূত্র সূচক। গড়ে বছরের প্রতি মাসে ৩০ দিন, এটাই হচ্ছে চন্দ্রবছরের নিয়ম। হতবাক হতে হয় যখন দেখি, চাঁদের আরবী প্রতিশব্দ قمر শব্দটি  قرآن এ ৩০ বারই এসেছে
شهر মানে মাস, قرآن মাজীদে এ শব্দটি এসেছে মোট ১২ বার। سنة মানে বছর,  قرآن এ এ শব্দটি এসেছে ১৯ বার। কারণ হিসেবে আমরা সম্প্রতি আবিষ্কৃত গ্রীক পণ্ডিত মেতনের ‘মেতনীয় বৃত্তের’ কথা উল্লেখ করতে পারি। তিনিই প্রথম এ তত্ত্বটি আবিষ্কার করেন যে, প্রতি ১৯ বছর পর সূর্য ও পৃথিবী একই বৃত্তে অবস্থান করে।
 قرآنفُجّارٌ (পাপী) শব্দটি যতবার এসেছে, أبرار (পুণ্যবান) শব্দটি তার দ্বিগুণ এসেছে। অর্থাৎ فُجّار ৩ আর أبرار ৬ বার এসেছে। এর কারণ হচ্ছে শাস্তির তুলনায় পুরষ্কারের পরিমাণ الله تعالى দ্বিগুণ দিবেন বলে ওয়াদা করেছেন।  قرآن এর سورة سبإٍ ৩৭ নং আয়াতে الله تعالى বলেছেন এ ধরনের লোকদের জন্যই (কেয়ামতে) দ্বিগুণ পুরষ্কারের ব্যবস্থা থাকবে। এটা হচ্ছে বিনিময় সে কাজের যা তারা দুনিয়ায় করে এসেছে’। এ কারণেই দেখা যায় গোটা  قرآن এ পাপী ও পুণ্যবান শব্দের মতো عذاب শব্দটি যতবার এসেছে, ثواب শব্দটি তার দ্বিগুণ এসেছে। অর্থাৎ عذاب ১১৭ বার, ثواب ২৩৪।
 قرآن এ একাধিক জায়গায় الله تعالى বলেছ্নে, আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করলে তিনি তার বিনিময় বাড়িয়ে দেবেন। সম্ভবত এ কারণেই  قرآن এ গরীবী শব্দটি এসেছে ১৩ বার, আবার তার বিপরীতে প্রাচুর্য শব্দটি এসেছে ২৬ বার।
 قرآن এ কারীমের বিভিন্ন জায়গায় এভাবে গাণিতিক সংখ্যার অদ্ভূত মিল দেখে  قرآن এর যে কোনো পাঠকই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ভাবতে থাকে, এটা নিঃসন্দেহে কোনো মানুষের কথা নয়।
কোনো একটি কাজ করলে তার যে অবশ্যম্ভাবী ফল দাঁড়াবে তার উভয়টিকে আশ্চর্যজনকভাবে সমান সংখ্যায় বর্ণনা করা হয়েছে। ‘গাছের চারা উৎপাদন করলে গাছ’ হয়। তাই এ দু’টো শব্দই এসেছে ২৬ বার করে। কোনো মানুষ হেদায়েত পেলে তার প্রতি রহমত বর্ষিত হয়। তাই এ দুটো শব্দ  قرآن এ এসেছে ৭৯ বার করে। হায়াতের অপরিহার্য পরিণাম হচ্ছে মওত। এ শব্দ দুটোও এসেছে ১৬ বার করে। الله تعالى বলেছেন যাকাত বরকত আসে, তাই  قرآن এ কারীমে যাকাত শব্দ এসেছে ৩২ বার, বরকত শব্দও ৩২ বার এসেছে। আবদ মানে গোলামী, আর আবীদ মানে গোলামগোলামের কাজ গোলামী করা, তাই  قرآن এ এই উভয় শব্দই এসেছে ১৫২ বার করে। ‘মানুষ সৃষ্টি কথাটা এসেছে ১৬ বার, আর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে এবাদাত সুতরাং তাও এসেছে ১৬ বার। ‘নেশা’ করলে ‘মাতাল’ হয়, তাই এ দুটো শব্দও এসেছে ৬ বার করে।
আর মাত্র দুটো মোজেযা বলে আমরা ভিন্নদিকে অগ্রসর হব।
 قرآنإنسان শব্দটি এসেছে ৬৫ বার, এবার إنسان বানানোর উপকরণগুলোকে  قرآن এর বিভিন্ন জায়গা থেকে যোগ করে মিলিয়ে দেখা যাক। প্রথম উপাদান تراب (মাটি) এসেছে ১৭ বার, দ্বিতীয় উপাদান نطفة (জীবনকণা) এসেছে ১২ বার, তৃতীয় উপাদান علق (রক্তপিন্ড) এটি এসেছে ৬ বার, চতুর্থ উপাদান مضغة (মাংসপিন্ড) এটি এসেছে ৩ বার। পঞ্চম উপাদান হচ্ছে عظام (হাড়), এটি এসেছে ১৫ বার। সর্বশেষ উপাদান হচ্ছে لحم (গোশত), এ শব্দটি এসেছে ১২ বার।  قرآن এ উল্লিখিত ( سورة الحج) এ উপাদানগুলো যোগ করলে যোগফল হবে ঠিক ৬৫। আর এসব উপাদান নিয়ে যে إنسان বানানো হয়েছে তাও ঠিক ৬৫ বার উল্লেখ করা হয়েছে।
الله تعالى قرآن এর سورة القمر এর প্রথম যে আয়াতটিকে চাঁদ বিদীর্ণ হওয়ার সাথে কেয়ামতের আগমন অত্যাসন্ন কথাটি বলেছেন, আরবী বর্ণমালার আক্ষরিক মান হিসাব করলে তার যোগফল হয় ১৩৯০, আর এই ১৩৯০ হিজরী (১৯৬৯ খৃস্টাব্দ) মানুষ সর্বপ্রথম চাঁদে আবতরন করে, জানি না এটা  قرآن এর কোনো মোজেযা, না তা এমনিই এক ঘটনাচক্র, কিন্তু الله تعالىর এই মহান সৃষ্টিতে তো ঘটনাচক্র বলতে কিছুই নেই। এ কারণেই হয়ত মানুষের চাঁদে অবতরণের সাথে  قرآن এর আলোচ্য আয়াতটির সংখ্যামানের এই বিস্ময়কর মিল আমরা দেখতে পাচ্ছি।

قرآن শরীফে শরীফে উনিশ সংখ্যাটির মোজেযা



قرآن শরীফে
উনিশ সংখ্যাটির মোজেযা
মিশরের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. রশীদ খলিফা قرآن নিয়ে এক ব্যাপক গবেষণা চালিয়েছেন। তিনি প্রাথমিকভাবে  قرآن এর প্রতিটি অক্ষর যেভাবে  قرآن এ সন্নিবেশিত আছে সেভাবেই তাকে কম্পিউটারে বিন্যাস্ত করেন।  قرآن এ ১১৪ টি সূরার অবস্থান এবং ২৯ টি সূরার শুরুতে ব্যবহৃত ‘حروف مقطعات’ যে নিয়মে বিন্যাস্ত আছে সে নিয়মের ভিত্তিতে তিনি হিসাব করতে শুরু করেন। এতে করে  قرآن এর কিছু অলৌকিক তত্ত্ব তাঁর কম্পিউটার স্ক্রীনে ভেসে ওঠে। এ অলৌকিক তত্ত্বের একটি হচ্ছে এই যে, সমস্ত قرآن গণিতের এক রহস্যময় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে
আছে।  قرآن এর সর্বত্র একটি অভিনব ও বিস্ময়কর গাণিতিক সংখ্যার জাল বোনা রয়েছে। সমগ্র قرآن যেন ১৯ সংখ্যাটিরই একটি সুদৃঢ় বন্ধন।
এই সংখ্যাটির মাধ্যমে গ্রন্থটিকে এমন এক গাণিতিক ফর্মূলায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে যেন এতে ব্যবহৃত বর্ণমালা, শব্দ ও আয়াতসমূহের কোথাও কোনো রকম পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন এবং বিয়োজন করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এই ফর্মূলাটি তৈরি হয়েছে ১৯ সংখ্যাটির গাণিতিক অবস্থান নিয়ে। সূরা التوبة ব্যাতীত قرآن শরীফের প্রত্যেক সূরার শুরুতে بسم الله الرحمان الرحيم আছে। সূরা التوبة এর শুরুতে না থাকলেও সূরা النمل যেহেতু দুবার আছে তা
এর সংখ্যাও সূরা সংখ্যার মতো সর্বমোট ১১৪-ই থেকে গেলো।
এই ক্ষুদ্র আয়াতটি ৪টি শব্দ এবং ১৯টি অক্ষর দ্বারা গাঠিত। শব্দ চারটি হচ্ছে, اسم الله الرحمان এবং الرحيم اسم অর্থ নাম,الله হচ্ছে স্রষ্টার মূল নাম, الرحمان অর্থ দাতা الرحيم অর্থ করুণাময়।
সমগ্র  قرآن এ ইসম শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১৯ বার, যা ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়। الله শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ২৬৯৮ বার, তাও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। الرحمان শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৫৭ বার, একেও ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়।
এই চারটি শব্দের গুণিতক সংখ্যার যোগফল হচ্ছে ১৫২, একইভাবে بسم الله শব্দের গুণিতক সংখ্যার যোগফলও ১৫২। এ ব্যাপারে আরেকটি জিনিসও قرآن পাঠকের মনে দারুণ কৌতূহল সৃষ্টি করবে। بسم الله الرحمان الرحيم বাক্যটির চারটি শব্দ  قرآن এ যতবার এসেছে এর অপরিহার্য গুণবাচক শব্দটিও ঠিক ততোবারই এসেছে। যেমন اسم শব্দটি এসেছে ১৯ বার। এর অপরিহার্য গুণবাচক শব্দ হচ্ছে واحد (একক) এই শব্দটিও এসেছে ১৯ বার।الله শব্দটি ২৬৯৮ বার এসেছে, এর স্বাভাবিক গুণবাচক শব্দ হচ্ছে ذو الفضل (দয়ার আধার) কথাটিও এসেছে ২৬৯৮ বার। الرحمان কথাটি এসেছে ৫৭ বার, এর স্বাভাবিক পরবর্তী গুণবাচক শব্দ হচ্ছে مجيد (পবিত্র) তাও এসেছে ৫৭ বার। الرحيم এসেছে ১১৪ বার, এর সম্মনসূচক পরবর্তী গুণবাচক শব্দ হচ্ছে الجامع (একত্রকারী), এটাও এসেছে ১১৪ বার। আমরা জানি, الرحمان হচ্ছে الله تعالىর দুনিয়ার নাম, অর্থাৎ এখানে সবার প্রতি তিনি দয়ালু, আখেরাতে তিনি দয়ালু শুধু মোমেনদের জন্যে, সেখানে যেহেতু সব নেক কাজের বিনিময় দ্বিগুণ, তাই তার আখেরাতের দয়ালু الرحيم শব্দটি দুনিয়ায় الرحمان দ্বিগুণ অর্থাৎ ১১৪ বার এসেছে।
আরবি ভাষার বর্ণমালার নির্দিষ্ট একটি সংখ্যামান আছে। সে হিসেবে بسم الله الرحمان الرحيم এর আয়াতটিকে ব্যবহৃত ১৯ হরফের সংখ্যামানের সমষ্টি হচ্ছে ৭৮৬। بسم الله الرحمان الرحيم এর আয়াতটিকে একই আয়াতের পুণরাবৃত্তি বাদ দিলে মোট বর্ণ থাকে ১০টি। ১৯ সংখ্যায় ব্যবহৃত অংক দুটির যোগফল ১+=১০। بسم الله الرحمان الرحيم তে পুনরাবৃত্ত অক্ষরগুলোর সংখ্যামান হচ্ছে ৪০৬। ৭৮৬ থেকে ৪০৬ বাদ গেলে বাকী থাকে ৩৮০, তাও ১৯ দিয়ে ভাগ করা যায়।
এই ১৯টি বর্ণমালার ছোট বাক্যটি بسم الله الرحمان الرحيم দিয়ে الله تعالى قرآن কে যেন এক দুশ্ছেদ্য বাঁধনে বেধেঁ রেখেছেন।
سورة المدّثّر এর ৩০ নং আয়াতে সম্ভবত الله تعالى একথাটাই বুঝাতে চেয়েছেন, عَلَيْهَا تِسْعَةَ عَشَرَ যার সাদামাঠা বাংলা অর্থ হলো ‘এবং তার ওপর রয়েছে উনিশ’ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কার ওপর? আগের আয়াতে যেহেতু দোযখের আয়াত বর্ণনা রয়েছে তাই কেউ কেউ বলেছেন, এরা হচ্ছে দোযখের পাহারাদার।
আলোচ্য সূরার এই আয়াতটির ক্রমিক নম্বর হচ্ছে ৩০, এ পর্যন্ত এসে ওহী নাযিলে একটু বিরতি দিয়ে الله تعالى এর আগে নাযিল করা سورة العلق এর ১৪টি আয়াত নাযিল করলেনস্মরণ থাকার কথা, سورة العلق এর প্রথম ৫ আয়াত দ্বারা দুনিয়ার বুকে ওহী নাযিল শুরু হয়। এই ৫ আয়াত সহ سورة العلق এর গোটা সূরার আয়াতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৯। الله تعالى قرآن এর প্রথম সূরাটিকে এভাবেই ১৯ দিয়ে বেধেঁ দিলেন। আবার সেই প্রথম পাঁচটি আয়াতে রয়েছে ১৯টি শব্দ। গুণলে দেখা যাবে, এই ৫ আয়াতে রয়েছে ৭৬টি অক্ষর। এবার গোটা سورة العلقটির প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তাতে ২৮৫টি অক্ষর আছে। সূরাটি যদিও নাযিল হয়েছে সবার আগে, কিন্তু  قرآن এ তার জন্য যে ক্রমিক নম্বর দেয়া আছে তা হচ্ছে ৯৬। এবার  قرآن এর শেষের দিক থেকে কেউ যদি গুণতে শুরু করে তাহলে ১১৪ থেকে ৯৬ পর্যন্ত গুলে আসতে দেখা যাবে, এই সূরাটির অবস্থান হবে ১৯। এখানে পরিবেশিত প্রতিটি পরিসংখ্যানকেই ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়। তাছাড়া গাণিতিক বিদ্যার ক্ষুদ্রতম সংখ্যা ও সর্ববৃহৎ সংখ্যাটিরও এক অভূতপূর্ব সংযোগ রয়েছে এখানে। এর একটি হচ্ছে ১ ও দ্বিতীয়টি হচ্ছে ৯। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে  قرآن এর অসংখ্যা পরিসংখ্যানই ১৯ দিয়ে ভাগ করতে পারলেও এই ১৯ সংখ্যাটি কিন্তু অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় নামনে হয়  قرآن এর মালিক বিভাজ্য ও বিভাজকের মধ্যে একটা মৌলিক সীমারেখা টানতে চেয়েছেন, যেমন সীমারেখা টানা হয়েছে স্রষ্টা ও তার সৃষ্টির মাঝে।
প্রথম ওহী سورة العلق এর প্রথম ৫টি আয়াতের শব্দ সংখ্যা ১৯ এর মতো  قرآن এ বর্ণিত আরো বহু পরিসংখ্যানও ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়। যেমন যিনি قرآن নিয়ে এসেছেন তিনি হলেন রসূল  قرآن এ রসূল শব্দটি ৫১৩ বার এসেছে। যার বাণী রসূল বহন করে এনেছেন তিনি হচ্ছেন রব  قرآن এ এ শব্দটি এসেছে ১৫২ বার।  قرآن এর কেন্দ্রীয় দাওয়াত হচ্ছে এবাদাত  قرآن এ এ শব্দটি ১৯ বার এসেছে। এই কেন্দ্রীয় দাওয়াতের অপর পরিভাষা হচ্ছে আবদ, এটিও এসেছে ১৫২ বার আর যে ব্যক্তি এই আবদ এর কাজ করবে তাকে বলা হয় আবীদ।  قرآن এ এটিও এসেছে ১৫২ বার। আর এ সব কয়টি পরিসংখ্যানই ১৯ দিয়ে ভাগ করা যায়।
 قرآن এর বিভিন্ন সূরার শুরুতে বিচিত্র কিছু বর্ণমালা ব্যবহৃত হয়েছে। এগুলোকে বলা হয় حروف مقطعات এগুলোর অর্থ الله تعالى ছাড়া কেউ জানে না। অবশ্য গবেষণার ফলে এগুলোর একটা গাণিতিক রহস্য জানা গেছে। এই حروف مقطعات মোট ২৯টি সূরার শুরুতে ১৪টি বিভিন্ন বর্ণমালায় সাজানো রয়েছে, তাও আবার ১৪টি ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে এগুলোকে এসব জাগায় বসানো হয়েছে। এদের সম্মিলিত যোগফল হচ্ছে (২৯+১৪+১৪)=৫৭ যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ألف-لام-ميم مقطعاتটি মোট ৬টি সূরার শুরুতে ব্যবহৃত হয়েছে। এই সূরাগুলোর মধ্যে ألف, لام, ميم বর্ণ তিনটি যতোবার ব্যবহৃত হয়েছে তার সমষ্টি আবার ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। পরিসংখ্যান মিলিয়ে দেখা যাক, سورة البقرةألف এসেছে ৪৫০২ বার, لام এসেছে ৩২০২ বার, ميم এসেছে ২১৯৫ বার, এ সবগুলোর যোগফল দাঁড়ায় ৯৮৯৯ যাকে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়। অনুরুপভাবে অবশিষ্ট সূরাগুলোর পরিসংখ্যান ছকে দেখানো হলো।
সূরা
ألف
لام
ميم
যোগফল
১৯ দ্বারা বিভাজ্য
البقرة
৪৫০২
৩২০২
২১৯৫
৯৮৯৯
১৯ দ্বারা বিভাজ্য
آل عمران
২৫২১
১৮৯২
১২৪৯
৫৬৬২
১৯ দ্বারা বিভাজ্য
العنكبوت
৭৪৪
৫৫৪
৩৪৪
১৬৭২
১৯ দ্বারা বিভাজ্য
الروم
৫৪৪
৩৯৩
৩১৭
১২৫৪
১৯ দ্বারা বিভাজ্য
لقمان
৩৪৭
২৯৭
১৭৩
৮১৭
১৯ দ্বারা বিভাজ্য
السجدة
২৫৭
১৫৫
১৫৮
৫৭০
১৯ দ্বারা বিভাজ্য
যোগফল
৮৯৪৫
৬৪৯৩
৪৪৩৬
১৯৮৭৪
১৯ দ্বারা বিভাজ্য
                          ১৯৮৭৪÷১৯=১০৪৬
سورة مريم এর مقطعات গঠিত হয়েছে ভিন্ন ধরনের ৫টি বর্ণমালা দিয়ে।قاف هاء ياء عين صادলক্ষ করলে দেখা যাবে, এ সূরায় قاف এসেছে ১৩৭ বার,هاء এসেছে ১৭৫ বার, ياء এসেছে ৩৪৩ বার, عين এসেছে ১১৭ বার صاد এসেছে ২৬ বার। অর্থাৎ এ সূরাটিতে এ হরফসমূহ মোট ৭৯৮ বার ব্যবহৃত হয়েছে, একে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়।
سورة الاعراف এর مقطعات হচ্ছে ألف-لام-ميم-صادএই সূরাটিতে ألف এসেছে ২৫২৯ বার, لام এসেছে ১৫৩০ বার, ميم এসেছে ১১৬৪ বার, صاد এসেছে ৯৭ বার। এই مقطعاتচারটির যোগফলকেও ১৯ দিয়ে ভাগ করা যায়।
سورة يس مقطعات হচ্ছে ياء এবং سينসূরাটিতে এ দুটো অক্ষর ব্যবহৃত হয়েছে মোট ২৮৫ বার, যাকে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়।
سورة المؤمن থেকে سورة الاحقاف পর্যন্ত এই ৭টি সূরার শুরুতে রয়েছে একই  -مقطعات, حاءএবং ميمধারাবাহিক এ সাতটি সূরায় এ দুটি অক্ষর মোট ২১৪৭ বার ব্যবহৃত হয়েছে, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
حروف مقطعات এর মধ্যে طه طسم طس বর্ণগুলোও আছে। এগুলো রয়েছে সূরা مرية, طه, شعراء ,النمل, القصص এ পাঁচটি  সূরায়া مقطعات মোট ১৭৬৭ বার ব্যবহৃত হয়েছে, যা ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়।
سورة يونس এবং سورة هود শুরু হয়েছে ألف لام راء এই مقطعات দিয়ে। সূরা দুটিতে হরফ তিনটি ব্যবহার হয়েছে মোট ২৮৮৯ বার, এটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
سورة يوسف سورة إبراهيم এবং  سورة الحجرও একই مقطعاتরয়েছে অর্থাৎ ألف لام راءসূরা তিনটিতে এই হরফগুলোর মোট ব্যবহার হচ্ছে এমনঃ
سورة يوسف এ অক্ষরগুলো এসেছে ২৩৭৫ বার, سورة إبراهيم এ অক্ষরগুলো এসেছে ১১৯৭ বার, سورة الحجر-এ এসেছে ৯১২ বার। এর প্রতিটি সংখ্যাই ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
 সূরা রাদ এর مقطعات হলোألف لام راءএতে আছে ৪টি অক্ষর। এ ৪টি অক্ষর এই সূরাটিতে মোট ১৮৪২ বার এসেছে, যাকে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়।
مقطعاتসম্বলিত সর্বশেষ সূরা হচ্ছে سورة القلمএর শুরুতে মাত্র একটি হরফ বিশিষ্ট مقطعات ব্যবহৃত হয়েছে। সেটি হচ্ছে نونএ সূরায় এই অক্ষরটি এসেছে ১৩৩ বার। এটি নিঃসন্দেহে ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
শুধু قاف অক্ষর দিয়ে শুরু হয়েছে سورة قافএখানে قاف অক্ষরটি গণনায় ঠিক রাখার জন্য الله تعالى কি ব্যবস্থা নিয়েছেন তা লক্ষণীয়।
الله تعالى  قرآن এ বারটি জায়গায় লুত সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করেছেন এবং প্রতিবারেই তাদের সম্বোধন করেছেন قوم لوط বলে। কিন্তু সূরা قاف  এর ১৩ নং আয়াতে এসে  قوم لوطএর স্থলে  إخوان لوطবলা হয়েছে। অর্থের দিক থেকে উভয়টাই সমান। ব্যতিক্রম করার কারণ হচ্ছে এখানে যদি  قوم لوطশব্দ ব্যবহার করা হতো তাহলে এ সূরায় قاف এর সংখ্যা ৫৮টি, যা ১৯ দ্বারা ভাগ করা যেত না। সে কারণে একই অর্থ বিশিষ্ট  إخوان لوط শব্দ ব্যবহার করে قاف এর সংখ্যা ৫৭ রাখা হয়েছে যেন তা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হয়।
ছোয়দ অক্ষরটি তিনটি সূরার মোকাত্তয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে  أعراف   مريم   صادসূরা  أعراف   صاد এসেছে সর্বমোট ৯৭ বার, সূরা  مريم صاد এসেছে মোট ২৬ বার, সূরা  صاد صاد অক্ষরটি এসেছে মোট ২৯ বার। ৯৭-২৬-২৯একেও ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়।
এখানে الله تعالىর গাণিতিক ফর্মূলা মিলানোর জন্য কি বিস্ময়কর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আরবীতে  بسطة শব্দের বানান লেখা হয়  ও তা দিয়ে,  سورة البقرةর ২৪৭ নম্বর আয়াতে এ শব্দটি এই বানানেই এসেছে। কিন্তু সূরা  أعراف এর ৬৯ নং আয়াতে   بسطة শব্দের বানান এসেছে বা  صاد طاء এবং ة দিয়ে, এর সাথে  صاد এর উপর ছোট্ট করে একটি سين বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে  بسطة শব্দের অর্থের কোনো তারতম্য ঘটেনি। এটা না করা হলে এ সূরা তিনটিতে  صاد এর সংখ্যা একটা কম হয়ে যেত এবং তা ১৯ দিয়ে ভাগ করা যেতো না। কি আশ্চর্য আল্লাহর কুদরত!