পড়া মনে না থাকার কারণ ও তার প্রতিকার
পড়া মনে না থাকা ছাত্র সমাজের একটা প্রধান সমস্যা। আসলে আমরা যা শিখি বা মনে রাখতে চেষ্টা করি তা আমাদের মস্তিষ্কে ধারণ করার ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত। তাই চেষ্টা করতে হবে স্মৃতিশক্তি বাড়াবার। আর সেজন্য বাড়াতে হবে চিন্তা, গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিশ্লেষণ এবং পারিপার্শিকের প্রতি মনোযোগ। সর্বোপরি আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতে হবে। তবেই আমাদের স্মৃতিশক্তি হয়ে উঠবে অবারিত। আর আমরা গড়ে উঠব সমাজের অন্যতম মেধাবী রুপে।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়-কোনো ছাত্র যখন কিছু পড়ে তখন তার ব্রেইনের কোষগুলোর উপর এক প্রকার প্রবাহের সৃষ্টি হয়। এ প্রবাহের আবরণ স্থায়ী-অস্থায়ী হওয়া নির্ভর করে মস্তিষ্কের মৌলিক কার্যক্রমের ওপরে। নিম্নে এ সম্পর্কে পৃথক পৃথক কিছু কার্যকরী ঈঙ্গিত দেয়া হলো।
একঃ মানুষ যেভাবে শেখে ঠিক সেভাবে মস্তিষ্কে ধরে রাখতে পারে না। এর অন্যতম কারণ হল- মানসিক চাপ ও মস্তিষ্কের চাপ। হাসি, গানও খোশালাপ-মানসিক চাপ প্রতিরোধক। আর মস্তিষ্ক চাপ রোধক হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম, সুষম খাদ্য এবং বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিৎ।
“মেমোরী বুষ্টার” গ্রন্থের লেখক ড. রবার্ট ফিন্কেল মনে করেন স্মৃতি বিস্মৃতির এবং স্মৃতি দুর্বল হবার অন্যতম কারণ হল- মস্তিষ্কের পুষ্টির অভাব। মানুষের বয়স যখন বাড়ে, তখন তাদের খাদ্য হজমের ক্ষমতা কমে যায়। পর্যাপ্ত পুষ্টি ছাড়া মস্তিষ্কের ভেতর যোগাযোগ স্তর বজায় থাকে না। ফলে শক্তি দুর্বল হয়ে যায়। সুতরাং বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
দুইঃ কোনো বিষয় বা প্রশ্নোত্তর মনে রাখতে হলে সর্বপ্রথম বিষয়টি স্পষ্ট করে শিক্ষা করা দরকার। অস্পষ্ট বা অসম্পূর্ণ শিক্ষা মনে না থাকার প্রধান কারণ। অর্থাৎ বিষয়বস্তুটির পূর্ণ অর্থ ও তাৎপর্যতা হৃদয়াঙ্গম করতে হবে এবং অন্যান্য জানা বিষয়ের সাথে তাকে সংযোগ করে নিতে হবে।
তিনঃ কোনো বিষয় ভুলে যাবার আরো একটি কারণ হল- কৌতুহলী বা আগ্রহী হয়ে না শেখা। কেননা শিক্ষার্থী যদি কি শিখব? কেন শিখব? শিখলে লাভ কি হবে? ইত্যাদি বিষয়গুলোকে কৌতুহলের সাথে গ্রহণ না করে,
তাহলে তার শেখা পূর্ণাঙ্গ হয় না এবং মনেও থাকে না।
চারঃ বিস্তারিত বিষয় ভুলে যাওয়া এক ধরনের মনোরোগ। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বার বার পড়তে হবে এবং লিখতে হবে। সহপাঠীদের সাথে ভুলে যাওয়া বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে। নীরবে নিভৃতে পুনঃ পুনঃ বিষয়টি মনে করার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখবে স্মরণ শক্তিকে বার বার অনুশীলন বা চর্চার দ্বারা ধরে রাখতে হয়।
পাঁচঃ মনে রাখার ব্যাপারটি একান্তই ঐচ্ছিক এবং আত্মবিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল। তাই স্মরণ রাখার ইচ্ছা নিয়ে পড়তে হবে। ইচ্ছা করলেই এবং সেই সাথে মনের জোর খাটালেই আমরা যেকোনো বিষয় দীর্ঘদিন মন এবং মস্তিষ্কে ধরে রাখতে পারি।
ছয়ঃ যে প্রশ্নোত্তরটি তোমার মনে থাকে না তা শেখার কৌশলে কিছুটা পরিবর্তন করতে পার। যেমন মুখস্ত করার পর ঐ প্রশ্নোত্তরের এমন কয়েকটি সূত্র বা ধারণা পয়েন্ট আউট করতে পার, যে সূত্র বা পয়েন্টগুলো পরবর্তীতে দেখলেই সম্পূর্ণ বিষয়টি তোমার মনে পড়ে যাবে।
সাতঃ রক্ত কণিকয় অক্সিজেনের স্বল্পতা মনে না থাকার আরও একটি কারণ। অক্সিজেন হচ্ছে মস্তিষ্কের জালানী আর নিয়মিত ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ে। ফলে অধিক অক্সিজেন মস্তিষ্কে যায়। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করলে তা মস্তিষ্ককে আরো কার্যকর করবে, স্মৃতি বা মনে রাখার শক্তিকে বাড়িয়ে দিবে।
এভাবে তুমি যে কোনো বিষয় বা প্রশ্নোত্তর বার বার অধ্যয়ন করে পুনঃ পুনঃ চর্চার মাধ্যমে স্মৃতিশক্তিতে গেঁথে রাখতে পার। তবে সব সময় আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। যেন তিনি তোমার স্মতিকে আরো বাড়িয়ে দেন ও স্থায়ী করেন। সে জন্য তাকে সন্তুষ্ট রাখা দরকার। আর সন্তুষ্ট করতে তার সকল হুকুম মেনে চলার বিকল্প নাই।
স্মৃতিশক্তি কমে যায় কেন?
বিভিন্ন করণে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। মস্তিষ্কের ধূসর অঞ্চল বা গ্রে-ম্যাটারে কোনো আঘাত লাগলে বা শুকিয়ে গেলে(ব্রেইন সিন্কেজ) স্মৃতিশক্তি লোপ পায়।
আশি বছরের পরে স্বাভাবিক ভাবেই ব্রেইন সিন্কেজ শুরু হয়। এজন্য বয়স বাড়তে থাকলে স্মৃতিশক্তি ক্রমশ কমে যায়। আবার মস্তিষ্কের পুষ্টির অভাবেও স্মৃতিশক্তি কমে যায়। তাই বেশি বেশি করে সুষম খাদ্য গ্রহণ করা দরকার। এভাবে ভূমিষ্ট হওয়ার সময় শিশুর মাথায় কোনোভাবে আঘাত লাগলে বা জন্মের পর শিশু না কাঁদলেও স্মৃতি কমে যায় এমন কিছু অসুখ যেমন- এ্যামনেশিয়া, এনসেফালো, মেটাবলিক এবং ডিসঅর্ডারজনিত কারণে লিপিজেসিস, মিউকো অ্যালাজাইনাজ প্রভৃতি হলে স্মৃতি কমে যায়।
ব্রেইন সম্পর্কে Brain run
গ্রন্থের লেখক ড. নিকল্যান বলেন- স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল- মনের দুর্বলতা এবং চর্চাহীনতা। চর্চা না করলে মানুষ জানা জিনিসও ভুলে যায়। তাই বেশি বেশি যে কোনো বিষয় চর্চা করলে স্মৃতিশক্তিকে বিস্মৃতি থেকে রক্ষা করা যায়।
মস্তিষ্কের গতি প্রখর করার উপায়
মানব মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তির ধীরতা, প্রখরতা এবং স্থায়িত্ব নির্ভর করে তার অধ্যবসায়ের উপর। সম্প্রতি ম্যাক্স প্লান্ক ইনস্টিটিউট অব ব্রেইন রিসার্চ প্রতিষ্ঠানের দুজন গবেষক Dr. Erich
Lehr এবং
Dr. Martin Wenzel
একটি বিস্ময়কর তথ্য আবিষ্কার করেছেন। আর তা হল- মানুষের মস্তিষ্কের ৫০ ভাগ ব্রেইনকে মানুষ সাধারণত কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়। তবে মানুষ ইচ্ছা করলে ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের সাথে তার মস্তিষ্কের সবটুকু ব্রেইনকে কাজে লাগাতে পারে। পারে প্রখর ও গতিময় করে তুলতে।
উপরোক্ত তথ্য ও আশাব্যঞ্জক বক্তব্যের আলোকে আমরা কয়েকটি উপায়ে স্মৃতিশক্তিকে প্রখর ও গতিময় করে তুলতে পারি। যেমন-
(১) মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক আচরণ বদলে দেয়। রাগ,
শোক, টেনশন অত্যধিক পড়ালেখা বা সারাদিন টিভি দেখার ফলে মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে মস্তিষ্ক হতে এক ধরনের বিষাক্ত হরমোন (কার্টিসল) নির্গত হয়, যা অক্সিজেন ও গ্লুকোজ ব্যবহারে বাধা দেয়। তাই কাজের ফাকে মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয়া একান্ত প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মেডিটেশন, যোগাসন প্রভৃতি ব্যবহার হলেও সর্বাপেক্ষা উত্তম হল- নামাজে দাড়ানো্ ও কুরআন তেলাওয়াত করা এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের নিজ ধর্মে মনোনিবেশ করা।
সুতরাং একটানা কয়েক ঘন্টা না পড়ে মাঝে মাঝে বিশ্রাম দিয়ে পড়তে হবে। একটানা পাঠে ক্লান্তি ও স্মৃতির নিষ্ক্রিয়তা আসে। তাই বিশ্রাম নিয়ে অধ্যয়ন করলে মস্তিষ্কের গতির প্রখরতা বৃদ্ধি পায়।
(২) কোনো বিষয়বস্তু না বুঝলেও বিষয়বস্তুটি নিয়ে সব সময় চিন্তা ও চর্চা করা যেতে পারে। চিন্তা ও চর্চার মাধ্যমে মস্তিষ্কের গতি বৃদ্ধি ও প্রখর হয়। প্রয়োজনে শিক্ষকদের শরণাপন্ন বা সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করা যেতে পারে। আবার কোনো ক্ষেত্রে বিষয়টি মন্ত্রের মত মুখস্ত করাও ভাল। এতে করে তার বিষয়বস্তুটি ধীরে ধীরে আয়ত্বে আসবে ও স্মৃতিশক্তি প্রখর হয়ে ওঠবে।
(৩) অক্সিজেন হচ্ছে মস্তিষ্কের জালানী। আর নিয়মিত ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ে। ফলে অধিক অক্সিজেন মস্তিষ্কে যায় ও মস্তিষ্ককে সুষম রাখে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করলে তা মস্তিষ্ককে আরো কার্যকর করবে, স্মৃতি বা মনে রাখার শক্তিকে বাড়িয়ে দেবে।
পড়ার টেবিলে
vপড়তে বসার পূর্বে সম্ভব হলে ওজু করে নেয়া যেতে পারে। এরপর দোয়া পড়ে মুখস্ত করা শুরু করা দরকার। এক্ষেত্রে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী তাদের স্ব স্ব-ধর্ম অনুসরণ করতে পারে।
vপড়ার পূর্বেই পড়ার বিষয় ঠিক করে নিবে। পড়তে বসে প্রয়োজনীয় জিনিস- কলম, খাতা, ক্যালকুলেটর,
পানি ইত্যাদি কাছে রাখবে যাতে বার বার উঠতে না হয়।
vনিবিষ্ট মনে পড়বে। এ সময় টেলিভিশন, কথাবার্তা, ফোন, গান-বাজনা, কিংবা অন্য কিছুর দিকে মনোযোগ দিবে না। আবার পড়তে বসে খাতায় দাগাদাগি, টেবিলে লেগে থাকা মোম উঠানো, কাগজ ছেড়া বা টুকরা করা প্রভৃতি থেকে বিরত থাকতে হবে।
vমুখস্ত করার সময় অসম্ভব কল্পনা করা যাবে না। যেমন- আমি যদি এরকম নেতা হতে পারতাম বা আমার এত এত টাকা থাকত তাহলে আমি ইত্যাদি ইত্যাদি করতাম। আবার কোনো ভাল চেহারা সম্পন্ন মেয়ে, ছেলে বা ছবি, নাটক ইত্যাদি নিয়েও বাজে কল্পনা করা যাবে না।
vএক নাগাড়ে দেড়-দু ঘন্টা কোনো পড়া মুখস্ত করার পর মিনিট পাঁচেকের জন্য হলেও হাঁটাহাঁটি বা মুখে একটু পানি ছিটিয়ে অথবা অন্য কিছু করে ব্রেইনকে বিশ্রাম দিতে হবে। মস্তিষ্ককে ঠান্ডা করার আরো একটি পদ্ধতি হল- মাথা ও ঘাড় সম্পূর্ণ ধুয়ে ফেলা অথবা ভিজা তোয়ালে দিয়ে ভালভাবে মুছে ফেলা। প্রয়োজন হলে পড়তে বসার পূর্বেই এ পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
vপড়ার সময় যে সব শব্দ বা বিষয় কঠিন বলে মনে হয় (যা মনে থাকছেনা) সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে খাতায় লিখে রাখো ও অন্য সময়ে তা নিয়ে চিন্তা করে স্মরণ করতে চেষ্টা কর। প্রয়োজনে খাতা দেখে নাও। যে প্রশ্নোত্তরটি মুখস্ত করতে চাচ্ছ তার সম্পূর্ণ অংশ একবার কিংব একেকটি বাক্য বারবার পড়ে মুখস্ত করা ঠিক নয়। বরং এক একটি ছোট প্যারা বা পাঁচ-সাত লাইন বার বার পড়ে মুখস্ত করা উচিৎ। এতে সম্পূর্ণ প্রশ্নোত্তর অল্প সময়ের ভেতর মুখস্ত হবে ও মনেও থাকবে।
vপড়া মুখস্তের সবচেয়ে বড় কৌশল হচ্ছে তুলনা করে বার বার পড়া। পঠিত বিষয়টিকে সংশ্লিষ্ট কোনো ঘটনার সাথে তুলনা করে মিলিয়ে পড়লে অল্প সময়ে তা মুখস্ত হবে ও দীর্ঘদিন মনে থাকবে।
শিক্ষার্থীর কলাম
vভাল রেজাল্ট এবং ভাল ফলাফল সবাই করতে চায় এবং সবারই কাম্য। কিন্তু সবার পক্ষে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। ভাল ছাত্র-ছাত্রীরা একটি প্রশ্নের উত্তরে কিছু সময় ব্যয় করলেই উত্তরটি আয়ত্বে এসে যায় এবং স্থায়ী হয়। পক্ষান্তরে দুর্বল শিক্ষার্থীরা একটি প্রশ্ন আয়ত্ব করার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করে আয়ত্ব করলেও তা স্থায়ীভাবে মনে রাখতে পারে না। তার অনেক কারণ রয়েছে। তাই তাদের উদ্দেশ্যে বলছি-
vযতদূর সম্ভব সময়কে তিন ভাগে ভাগ করে দুই ভাগ সময় বই নিয়ে পড়ে থাকতে হবে এবং পড়তে ও লিখতে হবে।
vনিজেকে সবসময় ভাল ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে গণ্য করবে। কখনও নিজেকে খারাপ ছাত্র-ছাত্রী বলে ভাববে না।
vনিজের দুর্বল বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ ভাবে সময় দিতে হবে। এ ছাড়া সকল বিষয়কেই সমান গুরুত্ব দিয়ে অধ্যয়ন করতে হবে।
vখারাপ ছাত্রদের সাথে সম্পর্ক না রেখে বিশেষত ভাল ছাত্রদের সাথে মিশবে ও সম্পর্ক রাখবে।
vযে বিষয় বুঝতে পারনা বা না পার তা ভাল ছাত্র অথবা শিক্ষকের কাছ থেকে বুঝে নিবে। এক্ষেত্রে লজ্জা বা সংকোচ করা যাবে না।
vনিজের ব্যর্থতা নিয়ে ভাবা যাবে না। তুমি যা জান সে বিষয় নিয়ে ভাবতে শিখতে হবে।
vক্লাস কামাই দেয়া যাবে না। ক্লাসে মনোযোগী হয়ে শিক্ষকের পাঠ শ্রবণ ও প্রয়োজনীয় নোট করতে হবে।
vদৈনন্দিন রুটিন ফলো করে চলতে হবে।
vপ্রত্যেকটি বিষয়ে প্রয়োজনীয় নোট করবে ও তা আয়ত্ব করবে।
vকোনো পড়া না বুঝে মুখস্ত করবে না।
vশুধু পাঠ্য পুস্তকই নয়, অন্যান্য বই যেমন- সাধারণ জ্ঞান, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, ডিকশনারী ইত্যাদি বই পড়তে হবে।
vসময়কে অবহেলা করে নষ্ট না করে মূল্যায়ন করতে হবে, বেশি বেশি স্টাডি করতে হবে তাহলে সাফল্য সুনিশ্চিত।
vসর্বোপরি নিজের চেষ্টা ও পরিশ্রমই হল বড় ব্যাপার। একজন সাধারণ শিক্ষার্থীকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে অসম্ভব বলে কিছুই নেই। পৃথিবীতে সবই সম্ভব।
ü লেখকের কলাম
মন বসে না পড়াশোনায়…
পাঠ্যবই দেখলেই গুণগুণ করে গাইতে ইচ্ছে করে ‘আর পারি না আর পারি না আমার ভীষণ ক্লান্তি লাগে, আর বসে না আর বসে না আমার মন পড়ার ঘরে’
এই রকম চিত্র অনেক দেখা যায় শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। দেখা যাচ্ছে যে সারাদিন টিভি দেখলে কোনো বিরক্তি বা অনীহা আসে না। গল্প-গুজব, ফেইসবুক, ইন্টারনেট পেলে তো সারাদিন কীভাবে যায় তা টেরই পাওয়া যায় না। খেলাধুলা পেলে তো কোনো কথাই নাই। আবার পিকনিকের খবর শুনলে তো হুশই হারিয়ে ফেলি। অর্থাৎ পড়াশোনা বাদে আর সকল কাজে কোনো রকমের সমস্যা নেই। যেই বই খোলা যায়, শুরু হয়ে যায় সকল ধরনের অলসতা, আজগুবি, অবাস্তব সকল চিন্তা-ভাবনা ইত্যাদি। আবার কিছু সময় পড়লে মনে হয় অনেক পড়েছি আবার অন্য সময় বা অন্য দিন পড়া যাবে। একটু বেশি পড়লে মাথা ধরে। পড়ার সময় খুঁজে পাওয়া যায় না, বাড়িতে কাজ করতে হয়, মাথায় ব্রেইন নাই ইত্যাদি হাজারো বাহানা।
আমি (লেখক) বিভিন্ন ধরনের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন ধরনের বই-পুস্তক পড়ে যা জানতে পারি যে, যদি কোনো ব্যক্তির মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট পাওয়া যায় তাহলে সে পড়াশোনার প্রতি প্রচুর আগ্রহী হবে। ভাল হবে তার রেজাল্ট। সম্ভব হবে সকল সফলতাকে ছিনিয়ে নিয়ে আসা। বৈশিষ্ট তিনটি হচ্ছে ১.জীবনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে। ২.
নিজের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস থাকতে হবে। ৩.
নিয়মিত সমীক্ষা নিতে হবে।
জীবনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবেঃ
জিনিস যত ভাল, দাম তত বেশি। বিষয়টি সবাই জানে। তাই কারো লক্ষ্য যদি কোর্সে পড়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে সে ভাববে আমার ৩.০০-৪.০০ ই যথেষ্ট।
এবার আপনি বলুন যার ইচ্ছা পাশ করা পর্যন্তই সমাপ্ত তার পড়ার প্রতি আগ্রহ কেমন হবে? যে শুধু পাশ করে কোনো বাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা করে সে তো চাইবে কোনো সময়গুলো পার হলেই আমি বেচে যাই।
এবার বলুন তো যে কোনো টারগেটই গ্রহণ করেনি তার পড়াশোনার কী অবস্থা হবে?
নিজের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস
এই সমস্যাটা আমাদের এলাকার প্রায় সকল শিক্ষার্থীদেরই আছে যে আমার দ্বারা এটা সম্ভব নয়। যেমন- কাউকে যদি বলা হয় তোমাকে গড়ে ৯৫% মার্কস পেতে হবে।
সে উত্তর দেবে যে এটা আমার দ্বারা সম্ভবপর নয়। ছাত্রদের নিজের প্রতি আস্থার অভাবই তাদেরকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করতে দেয়না। আর যখন সুনির্দিষ্ট ও উচ্চ আশা থাকে না তখন এমনিতেই পড়াশোনার প্রতি অনীহা চলে আসে। আমি দেখেছি অনেক ছাত্রকে যাদের দ্বারা বিজ্ঞানী হওয়া পর্যন্ত সম্ভব কিন্তু শুধুমাত্র এ কারণেই ফেল করে বসে থাকে। অনেকেই বলে থাকে যে, অমুক অত্যন্ত মেধাবী, বুদ্ধিমান,
হাতের লেখা সুন্দর ইত্যাদি। পক্ষান্তরে আমি মনে করি যে, তারও একটি মাথা আমারও একটি, তার চোখও দুটি আমারও দুটি, তারও চব্বিশ ঘন্টায় একদিন আমারও চব্বিশ ঘন্টায় একদিন। সে যদি পারে আমি পারব না কেন? এই জেদ যদি কেউ করতে পারে, তার কিছুই বাধবে না ইনশাআল্লাহ।
নিয়মিত সমীক্ষাঃ
এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ আপনার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে এবং আপনার নিজের প্রতি আস্থাও আছে কিন্তু তারপরেও আপনি জীবনে সফল নাও হতে পারেন শুধুমাত্র সমীক্ষা না থাকার কারণে। বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি- নিয়মিত সমীক্ষা থাকলে আপনি আপনার আশানুযায়ী তো পাবেনই, বরং আপনি ভাবতেও পারবেন না যে আপনি কত কিছু অর্জন করে ফেলেছেন।
Ø
যেভাবে আপনি সমীক্ষা নিবেনঃ
ü
আজই বাজার থেকে একটি খাতা কিনে নিয়ে আসুন। যদি আপনার কাছে তেমন খাতা থাকে তাও হবে।
ü
আপনার নিত্য প্রয়োজন তথা খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, গোসল,
পেশাব-পায়খানা, নামাজ,
বাড়ির প্রয়োজনীয় কাজকর্ম বাদে কতটুকু সময় বাচে তার হিসাব নিন। এখানে ক্লাস চলাকালীন সময়ে এক শিক্ষকের প্রস্থান ও অন্য শিক্ষকের আগমনের মাঝে যে সময়টুকু পান তার ও হিসাব নিন।
ü
এবার দেখুন, কতটুকু সময় আপনি নষ্ট করলেন ও কতটুকু কাজে লাগালেন।
ü
ফেইসবুক, গল্প, টিভি ইত্যাদির পেছনে খুব সময় দিন। অর্থাৎ যে কাজ আপনার ভাল লাগে যেমন- খেলাধুলা, গল্প-গুজব ইত্যাদির পিছনে খুব কম সময় ব্যয় করুন।
ü
গতকাল ও আজকের সময়ের মাঝে কৃত কর্মের মাঝে তুলনা করুন। দেখুন কী কী কাজ আপনার করা ঠিক হয়নি। এবার প্রতিজ্ঞা করুন আগামীকালের জন্য যে,
অমুক কাজটির পেছনে সময় কম দিতে হবে ও অমুক কাজ আর করা যাবে।
ü
আমি আগেই বলেছি যে সুনির্দষ্ট উচ্চ টারগেট নিন। এবার আপনি মিলেয়ে দেখুন যে আপনি যেভাবে চলছেন তা আপনাকে টারগেটে পৌঁছিয়ে দিতে পারবে কিনা। যদি উত্তর হয় হ্যাঁ তাহলে আপনি সেভাবেই চলতে থাকুন।
ü
আগে থেকেই ঠিক করে নেবেন যে এই সপ্তাহে আপনার টারগেট হবে এই, এই মাসে আপনার টারগেট হবে এতটুকু। এবার মাস বা সপ্তাহ শেষে মিলিয়ে দেখুন যে আপনার যা অর্জনের ইচ্ছা ছিল তা আপনি করতে পেরেছেন কিনা। যদি উত্তর হয় হ্যাঁ তাহলে আপনি সেভাবেই চলুন,
নতুবা চিন্তা-ভাবনা করে ঠিক করে নিন আপনাকে কী করতে হবে।
ü
বাৎসরিক হিসাবগুলো সযত্নে রেখে দিন যে এ বছরের অর্জন এই, গত বছরের অর্জন ছিল এই। এভাবে আপনি চলতে থাকুন।
ü
যদি পড়াশোনাতে মনোযোগ না বসে তাহলে আপনি গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন কেন আপনার মন বসে না। সমস্যাটা চিহ্নিত করে দুরীভূত করুন। কখনো কোনো রকমের খারাপ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া ঠিক নয়। এমনকি ভবিষ্যতের জন্যেও এমন ইচ্ছা রাখা যাবে না।
ü
মন যদি নিয়ন্ত্রণে আনতে সমস্যা হয় তাহলে নিজেকে বীর ভেবে জিহাদ করুন নিজের মনের বিরুদ্ধে। মন যা বলে তার বিপরীত করবেন। মনকে প্রশান্তি দেবার লক্ষ্য কোনো কিছু কল্পনা করা ছেড়ে দিন। এরকম করুন যতদিন মন আপনার বাধ্যগত না হয়।
ü
যদি আপনার অভিযোগ হয় পড়া মনে থাকে না তাহলে অন্তত প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর সেই বিষয়গুলো রিভিশন দিন।
পড়াশোনায় বিভিন্নভাবে মনোযোগ আনা যেতে পারে
·
অজু করলে বা মুখ ধৌত করলে
·
কিছু সময় বাইরে হাটাহাটি করলে
·
মনের আশা পূরণ করলে
·
সফল ব্যক্তিদের জীবনী পড়লে
·
কিছু সময় ঘুমিয়ে নিলে
·
একটু বিশ্রাম নিলে
·
মুখস্ত বিষয় লিখলে
·
বন্ধুদের ভেতর চ্যালেঞ্জ করলে যে আমাকে তোমরা কেউ আটকাদে পারবে না। যখন আটকে যাবে তখন এমনিতেই পড়ায় মনোযোগ আসবে।
·
নিজের চেয়ে ভাল শিক্ষার্থীদের ভাল পারার বিষয়গুলো খেয়াল করলে
·
দেখি আমি কেমন পারি এই ভেবে কোন মডেল পরলে
·
সবচাইতে বড় কথা হচ্ছে সবকিছু বুঝে পড়তে হবে তাহলে পড়ার মধ্যে মজা পাওয়া যাবে। আর না বুঝে পড়লে কখনো পড়ার মধ্যে মজা আসবে না। পড়া বোঝার জন্য সবকিছুই করতে হবে। কোনো রকমের লজ্জা করা যাবে না। এজন্য বাংলা-বাংলা, ইংরেজি-বাংলা, বাংলা-ইংরেজি ডিকশনারী থাকতেই হবে। এছাড়া ইংরেজি, অংকসহ সকল বিষয়ের জন্য অতিরিক্ত বই পুস্তক পড়তে হবে। তবেই পড়ার মধ্যে মজা আসবে। শুধুই পড়তে মনে চাইবে।
·
যারা জীবনে কিছু করতে পেরেছে তাদের জীবন কাহিনী শুনলেও পড়াশোনায় মন বসে।
·
কেউ যদি কোন ভাল কাজ করে থাকে আমরা তাকে পুরষ্কৃত করি। যখন আপনি কোনো ভাল কাজ করবেন তখন নিজেকে নিজেই পুরষ্কৃত করুন। যেমন- কয়েকদিন অবিরাম পড়াশোনা করে কোনো জটিল বই আয়ত্ব করে ফেললেন তখন দু’একদিন নিজেকে গল্প-গুজব, ঘোরাফেরা তথা যে সকল কাজ আপনার ভাল লাগে সেগুলো করুন। এ সময়ে কোনো পড়াশোনা করবেন না। এতে মন খুব ভাল থাকে ও যে কোনো ভাল কাজের জন্য মন প্রস্তুত থাকে।
·
যদি আপনার মন কিছু কৃতিত্বের কারণে আর পড়তে না চায় তাহলে আপনার জীবনে আপনার দ্বারা ঘটে যাওয়া ভুলগুলোর দিকে খেয়াল করুন।
·
আর যদি আপনার শুধু এগুলো খেয়াল হতে থাকে যে আমি অযোগ্য, আমার দ্বারা কিছুই সম্ভবপর নয়, আমি খারাপ ইত্যাদি। এক্ষেত্রে আপনি নিজের জীবনে কৃত সকল ভাল কাজ, সক্ষমতার সকল কর্মকান্ড খেয়াল করতে থাকুন। মন ভাল হয়ে যাবে। কেননা সকল মানুষেরই ভুল রয়েছে। কেবল নবীগণই নিষ্পাপ।
যদি ইচ্ছা থাকে
যদি আপনার ইচ্ছা না থাকে তাহলে হাজার উপদেশেও কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। আর যদি আপনার ইচ্ছা থাকে তবেই কেবল সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব। অন্যথায়, মাথায় ব্রেইন নাই, অমুক সমস্যা তমুক সমস্যা ইত্যাদি বলা ছাড় নিজের বোকামী ঢাকার আর কোনো পথ বাকী থাকবে না। দুনিয়াতে সবকিছুই সম্ভব যদি আপনার থাকে। তবে একথাও সত্য যে যদি চোরদের সাথে থাকা যায় তাহলে চুরি করা ছাড়া মজাদার কাজ দুনিয়াতে আর নেই, এমন অবস্থা হবে। এক্ষেত্রে বাবা-মাকে দোষ দিলে ভুল হবে না যে তারা সন্তানদিগকে ছোটকাল থেকেই কুসংসর্গতে থাকতে দেখেও তেমন কিছু বলেনি। যদি আপনার বিশ্বাস না হয় তাহলে আপনি কিছুদিন যারা নামাজ পড়ে তাদের সাথে থাকুন দেখবেন আপনার ও নামাজ পড়তে মন চাইবে।
মানুষ খারাপ
হয় কেন?
এর উত্তর খুবই সহজ। আপনি পরীক্ষা করে দেখবেন যে প্রতিটি মানুষ কুকর্মকে ঘৃণা করে। খারাপকে খারাপ বলে। তাহলে কেন এত খুন-রাহাজনী, হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি সকল অপকর্ম সমাজে সংঘটিত হয়? হাদীস শরীফে আছে, প্রতিটি মানুষ ফিতরত তথা স্বাভাবিক বা ভাল চরিত্র নিয়ে জন্ম নিয়ে গ্রহণ করে, কিন্তু তার পিতামাতা তাকে মূর্তিপুজক, খ্রিস্টান ইত্যাদি বানায়। অর্থাৎ জন্মগতভাবে কেউ খুনি হয়ে জন্মায় না। যে পরিবেশে চলাফেরা করে সেই পরিবেশের লোকজনের স্বভার ধীরে ধীরে তার মধ্যে আসতে থাকে। দেখা যায় যে, আশেপাশের সবাই ধূমপান করলে সেও ধূমপানের প্রতি আসক্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। “ মানুষ নিষিদ্ধ বস্তুতে লোভী হয়।” অতএব অভিভাবকদের অবশ্যই এ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। অন্যথায় পরে হাজারো আফসোস করেও কোনো লাভ হবে না। দুনিয়াতে যত বখাটে আছে কেউই কিন্তু হুট করে কোনো অন্যয় করার আগে মনে মনে ভেবে নেয় কীভাবে সে অন্যয় করবে। আর এ সময় সে অন্যয়কে অন্যয় মনে করে না, স্বাভাবিক মনে করে। কোনো লম্পটকে ভাল হতে বললে সে উত্তর দেয় যে দুনিয়াতে কেউই ভাল নেই। সুতরাং আমি ভাল হয়ে কী করব। তাই ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের ভাল ও বড় ব্যক্তিদের গল্প শোনানো, ভাল কাজে উৎসাহ প্রদান ইত্যাদির মাঝে বড় করে তুলতে হবে।
সর্বোপরী সব সময় সকল সমস্যা সমাধান ও প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে মহান আল্লাহর কাছে রোনাজারী করতে হবে। তবেই সম্ভব হবে সবকিছু । আজ এখানেই সমাপ্ত। ভবিষ্যতে আল্লাহ তাআলা তওফীক দিলে আবার কিছু লেখা যাবে।
কারো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে, আমার ভুল হলে, আরো জানার থাকলে, পরামর্শ দেওয়ার থাকলে যোগাযোগ করবেন।
ভুল হলে ক্ষমা করবেন।
আমার ইমেইল hasansuhail10@gmail.com
আমার ওয়েবসাইট www.suhailhasan.blogspot.com
No comments:
Post a Comment